আমিনূল ইসলাম

ঢাকা, ২ জুন

 

চিনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিংপোষ্টে’ লেখা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিরোধীরা আগাম নির্বাচনের দাবি জানালেও সেই দাবি উপেক্ষিতই থাকবে বলে ২৮ মে এই গণমাধ্যমের প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিমান মুখার্জির একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

 

ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে ইউনূসদের নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার কৌশল। সাউথ চায়না মর্নিংপোষ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সেনাবাহিনী এবং বিরোধীরা আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ইউনূস প্রথমে অর্থনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কার চালু করতে চান’। প্রতিবেদনে ইউনূস সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে হতাশা ৮৪ বছর বয়সী এই নেতাকে বিপদের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের সাফ কথা, ইউনূসের শাসনামল, ‘স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য জাতির সংগ্রামকে আরও জটিল করে তুলেছে’।

 

সম্প্রতি লোকমুখে ইউনূস ছড়িয়ে দেন তিনি ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে নিজের চেয়ার মজবুত করেন তিনি। এপ্রসঙ্গে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ ইউনূসের হুমকি নতুন নির্বাচনের সময় নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে’।

 

বিশিষ্ট বিশ্লেষকদের বক্তব্যও উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে। লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত বলেছেন, ‘অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত’।

 

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞ লন্ডন-ভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলেছেন, ‘ইউনূসের নিয়োগের পর প্রায় এক বছর কেটে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, যখন বাংলাদেশের অন্যান্য সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দল বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচনের জন্য প্রায় সর্বসম্মতভাবে সম্মত হয়েছে, তখন অতিরিক্ত বিলম্ব কেন ?’

 

নির্বাচন নিয়ে টালবাহান চলছেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (এনসিপি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। দলনেত্রী তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলীয় কর্মীদের বলেছেন, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতেই হবে। তাঁর ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে অটল। আবার ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) ইউনূসের সংস্কার এজেন্ডা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জামায়াত অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ের পাশাপাশি সংগঠনকে বাড়িয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত। মৌলবাদীদের জোট গড়ে তুলছেন তাঁরা।

 

চিনা সংবাদ পত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি ততই অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। বিদেশি রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে পোশাক তৈরি শিল্প। ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং আরও অস্থিতিশীলতা দেশের অর্থনীতির জন্য প্রায় বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘২০০৯ সালের পিলখানা কাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের সহ অনেক দোষী সাব্যস্ত অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যা সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে, যারা এখন দেশের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার একমাত্র রক্ষক’।

 

সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট হওয়া উচিত। তিনি অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচনে গুরুত্ব আরোপ করেন। তাই এনসিপি ও তাঁদের মদত দাতারা সেনা বাহিনীরও সমালোচনা শুরু করেছে। অথচ, দেশের পুলিশি বন্দোবস্ত বিকল হওয়ার পর সেনারাই দেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তবু তাঁদের মনোবল চূর্ণ করারও ষড়যন্ত্র চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here